শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ::
দাম্পত্যজীবনে পর পর চার কন্যা সন্তান জন্ম দেন গৃহবধূ শিপা বেগম (২৯) এতে খুশি হননি স্বামী সুমন মিয়া। তার চাই পুত্র সন্তান। এ নিয়ে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হতে হয় হতভাগ্য গৃহবধূ কে। বাড়তে থাকে নির্যাতনের মাত্রা। শেষমেষ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিষ পান করে আত্মহত্যা করলেন ওই চার সন্তানের জননী। শুক্রবার বিকেলে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের বড়কাপন গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, প্রায় ১০ বছর পূর্বেক জগন্নাথপুর পৌরসভার ইকড়ছই এলাকার মৃত মকদ্দুছ মিয়ার মেয়ের সঙ্গে বড়কাপন গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদ এর ছেলে সুমন মিয়ার সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর দাম্পত্যজীবন সুখের ছিল। বিয়ের প্রথম বছরেই তাদের প্রথম কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
তারা জানান, বেশ ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু সংসারে অশান্তির আগুন জ্বলে দ্বিতীয় কন্যা সন্তান জন্মের পর। তারপর একটি ছেলের আশায় পরপর আরো দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। একে একে চার কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়ায় স্ত্রীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন স্বামী সুমন মিয়া। প্রায়শই তিনি স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করতেন।
এরপরও স্বামীর সংসারে সুখে থাকার জন্য বছরখানেক আগে শিপা বেগমের মা মনু বেগম তার সৌদি প্রবাসী মেয়ের কাছ থেকে মেয়ের জামাই সুমন মিয়াকে ২ লাখ টাকা ধার দেন। এতে করে শিপা বেগমের সংসারে সুখের চেয়ে আরো দুঃখের ছায়া নেমে আসে।
মাসখানেক আগে ধার দেওয়া ওই টাকা সুমন মিয়ার কাছে ফেরত চাওয়া হলে, শিপা বেগমের ওপর শুরু হয় স্বামীর অমানবিক নির্যাতন। আর সেই নির্যাতন সইতে না পেরে শুক্রবার বিকেলে বিষ পান করেন ৪ সন্তানের ওই জননী। পরে পরিবারের লোকজন শিপা বেগমকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
শিপা বেগমের মা মনু বেগম বলেন, ‘কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়া ছিল আমার মেয়ের অপরাধ। ছেলে সন্তান জন্ম হয় না বলে প্রায়ই আমার মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন করত ওর স্বামী। মেয়ের সুখের জন্য জামাইকে ব্যবসার জন্য ২ লাখ টাকা ধার দেই। আর সেই টাকা চাওয়াতে আমার মেয়েকে নির্যাতন করতে শুরু করে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। ওর মৃত্যুর জন্য তারাই দায়ী। আমি তাদের বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে শনিবার বিকেলে জগন্নাথপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান যুগান্তর কে বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্হা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, শিপা বেগমের লাশ এখনও সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। সেখানে ময়নাতদন্ত করা হবে।
Leave a Reply